গণ অভ্যুত্থানের মামলা: সিলেটে প্রথম মামলা তদন্ত করে ২৮ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ

ডেস্ক রিপোর্ট :: সিলেটের কোতোয়ালি থানার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি মামলা তদন্ত করে ২৮ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)।

১ নম্বর নথিভুক্ত মামলাটির বাদী শেখ শফিউর রহমান কায়েছ।

এই মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী, সওজ, পাউবো, এলজিইডির প্রকৌশলী, ব্যাংকার, সরকারি চাকরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও প্রবাসী সাংবাদিকও আসামি ছিলেন। 


মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই আন্দোলন দমনে তিনি দেশিয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর আসামিরা আক্রমণ করেছিলেন।

পুলিশের তদন্তে ঘটনার সঙ্গে দৃশ্যমান কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ার বিষয়টি প্রমাণ হওয়ায় মামলার আসামি থেকে ২৮ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে এসএমপি।

নির্দোষ কেউ যেন মামলায় হয়রানির শিকার না হন সেজন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ছাত্র আন্দোলন সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর তদন্ত করছে। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে কারও সম্পৃক্ততা না পেলে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩-এ ধারা মোতাবেক তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে আদালতের কাছে। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর এসএমপির কোতোয়ালি থানায় করা ১ নম্বর মামলা দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করা হলো।

এসএমপির তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শেখ শফিউর রহমান কায়েছের করা ওই মামলায় ২৮ জন আসামি আছেন, যাদের ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের সবাইকে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩-এ ধারা মোতাবেক এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
 
জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তীতে এসএমপিতে যোগ দেওয়া কমিশনার মো. রেজাউল করিমের তত্ত্বাবধানে মামলাটির তদন্তকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি তিনি পদোন্নতি পেয়ে সিলেট থেকে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। সিলেট থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে হামলার ঘটনার অনেক মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামি সংখ্যা অসংখ্য। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন নিয়ে মামলা বাণিজ্য করতে শুরু করে একটি চক্র। এই চক্রটি যেন কোনো নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করতে না পারে, সেজন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। এসব মামলার তদন্ত করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩এ ধারা মোতাবেক মামলায় সংশ্লিষ্ট নয় এমন মানুষকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট কোতোয়ালি থানাধীন ১নম্বর মামলার ২৮ জন নিরীহ আসামিকে অব্যাহতি দিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।’

গণ-অভ্যত্থানের পর সিলেট কোতোয়ালি থানায় ১ নম্বর মামলার বাদী শেখ শফিউর রহমান কয়েছের সঙ্গে কথা বলে ২৮ জনের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই ২৮ জনের মধ্যে বেশিরভাগই হলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অফিসার। তাই আমরা আদালতে সুপারিশ করেছি তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য। বাকি যা আছে আদালত যাচাই বাছাই করে দেখবেন। এসএমপির বিদায়ী কমিশনার জানিয়েছেন, তার কর্মকালীন এ রকম আরও কয়েকটি মামলার তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এতে নিরীহ ও নির্দোষ আসামিদের অব্যাহতি প্রদানের আবেদন আদালতে দাখিল প্রক্রিয়াধীন।’

অব্যাহতির সুপারিশপ্রাপ্তরা
অব্যাহতির সুপারিশপ্রাপ্ত ২৮ জন হচ্ছেন, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন, সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ, সিলেট স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান, নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটি সিলেটের সহকারী অধ্যাপক মো. সাহাদাৎ হোসেন পারভেজ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম ফারুক হোসেন, সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুর হাসান শোভন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা সাবেক প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের ভারপ্রাপ্ত পেশকার সাধন কুমার চাকমা, সহকারী প্রেস অফিসার গোলাম মোস্তফা লিটন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শাহজালাল উপশহর শাখা ম্যানেজার ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যোতি লাল গোস্বামী, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সুনামগঞ্জ ব্যাঞ্চ ম্যানেজার ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. গোলাম আজাদ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সুপারভাইজার কাওছার আহমদ, সেবুল অধিকারী ও চয়ন দাশ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, অফিস সহায়ক মোফাচ্ছর হোসেন, ফাহিম আহমদ, জুনায়েদ আহমদ, জান্নাতুল ইসলাম, বাজার আদায়কারী আনোয়ারুল হক, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জিকরুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আব্দুল হাই আজাদ, হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের প্রধান খাদেম ও মাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি সামুন মাহমুদ খাঁন, লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক মনোয়ার জাহান চৌধুরী, ব্যবসায়ী সৈয়দ ইফতেকার আহমদ এলিছ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. খালেদুজ্জামান খালেদ, সিম্ফনি মোবাইল ফোন কোম্পানির ম্যানেজার মো. এমরান হোসেন তানিম, দোকানদার হেদায়েত হোসেন খোকন ও ইউসুফ হোসেন।

সূত্র :খবরের কাগজ
নবীনতর পূর্বতন