দীর্ঘ ৪৫বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিধান স্যার



স্টাফ রিপোর্ট :: গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ,দত্তরাইল আর বিধান স্যার যেনো এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিলেন। অবশেষে দীর্ঘ ৪৫বছরের বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ শিক্ষা গুরু। বিধান পাল ১৯৮৫সালের ২৪ মার্চ শিক্ষকতা জীবনের যাত্রা শুরু করেন। আজ শেষ কর্ম দিবস শেষে নিজ কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন এ মহান মানুষ গড়ার কারিগর। ডেইলি গোলাপগঞ্জ পাঠকদের জন্য হুবুহু পোস্টটি তুলে ধরা হলো __

**ষাট বছরের উপলব্ধি __

অন্য দিনের মতো আজকের দিনটিও চলে গেল। কিন্তু ইস্কুলকে ঘিরে আমার কর্মব্যস্ততা চিরদিনের জন্য আজকে শেষ হলো। ফলে দিনটি আমার জন্য অত্যন্ত স্মরণীয় দিন। ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসের ২৪ তারিখ স্কুলে শিক্ষকতায় যোগদান করি। ইচ্ছা ছিল কিছুদিন করবো, অন্য কোন চাকুরী পাওয়া গেলে চলে যাব কিন্তু ব্যাংকের চাকুরীর নিয়োগ পত্র পেয়েও যাইনি ততদিনে পেশাটি নেশায় পরিণত হলো। ছিলাম বিধান পাল, হয়ে গেলাম বিধান স্যার। যখন যেখানে যাই পেয়ে যাই প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাদের সৌজন্যতায় আশেপাশের সকলেই শিক্ষক হিসাবে সম্মান করে, হয়ে উঠি বিশেষ একজন। প্রতিষ্ঠানটির কাছে আমি চির ঋণী হয়ে থাকবো। যতটুকু করেছি আরো অনেক কিছু করতে পারতাম, সে সময় উপলব্ধি হয়নি বলে। প্রতিষ্ঠানে আমার ক্ষুদ্র অবস্থানে থেকেও অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল কিছুটা করেছি, বাকিটুকু পারিনি বিভিন্ন সীমাবদ্ধতায়। শিক্ষার্থীগণ এক একটি পরিবার থেকে আসে, যাদের মন-মানসিকতা ভিন্ন, চাহিদা ভিন্ন। তাদের ভিতরে তাকে অনেক কিছু চাওয়া-পাওয়ার বাসনা একজন শিক্ষক, প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রকৃত অভিভাবক বন্ধু হয়ে যখন উঠে, তখন শিক্ষকের প্রতিটি কথা সে শুনে ও মেনে চলে। আমি অনেক অভিভাবককে পেয়েছি যারা তাঁর ছেলে মেয়েকে নিয়ে আসে, আমি যেন কিছু পরামর্শ দেই এই আবদার নিয়ে। আসলেই শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। আর এ পেশায় তাই যোগ্য লোকের প্রয়োজন। মনে হচ্ছে আমিও এর উপযুক্ত ছিলাম না। অনেক শিক্ষার্থীকে জানা হয়নি। হয়তো সেদিন সে অভ্যূক্ত অবস্থায় বিদ্যালয়ে এসেছিল,হয়তো পরিবার চালানোর জন্য দিনমজুরি করতে চলে গিয়েছিল, অসুস্থ মা বাবাকে নিয়ে চিকিৎসা করতে গিয়েছিল। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সমস্যাগুলো বিরাজমান। আমার এগুলো জানা হয়নি সব সময়। একজন শিক্ষক এগুলোর সমাধানও দিতে পারেন কারণ শ্রেণীতে কিছু দানশীল ব্যক্তির ছেলে মেয়েও থাকে। এ ব্যবস্থাপনাটুকু শিক্ষক করতে পারলে শিক্ষার্থীর জীবন পরিবর্তন হবে, সমাজ বদলে যাবে ।শিক্ষকতার প্রথম দিকে এগুলো বুঝতে পারিনি। ব্যর্থতাটুকু ব্যক্তিগতভাবে আমার, সফলতা শিক্ষকতা পেশার। সহকর্মী শিক্ষকগণের সহযোগিতা পেয়েছি মন প্রাণ ও কর্ম দিয়ে। তাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। আমার নৈতিকতার জন্য অনেকে ভয় করত, ক্ষমাপ্রার্থী তাদের কাছে । 

চাকুরী থেকে অবসর নিলেও জীবন থেকে তো অবসর নেওয়া হচ্ছে না তাই সুস্থ শরীরে বাকি জীবন চালিয়ে নেওয়ার প্রার্থনা অবিরত। আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে কিছু কথা (ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নিয়ে) যা তার দ্যুতি আরো ছড়াতে সহায়ক হবে বলে মনে করি, তা পরবর্তীতে কোন এক সময় প্রকাশ করব। অনেক অনিয়ম অসংগতি শুধুমাত্র সাহসী সিদ্ধান্তে অতিক্রম করা সম্ভব। প্রত্যেক অভিভাবক চায় তাঁর সন্তান ভালো পরিবেশে থাকুক, ভালো হয়ে উঠুক। মুষ্টিমেয় কিছু লোক এটির বাধা। তারা এটিকে নিয়ে বাণিজ্যে মশগুল। তাই আমার কাছে মনে হয় এগুলো কোন সমস্যা নয় শুধুমাত্র চালকের সঠিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। 

ঈশ্বরকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আমাকে দীর্ঘ সময় কাজ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা দেওয়ার জন্য।স্কুলের সাথে যুক্ত প্রায় ৪৫ বছরের অধিক কাল।সহকর্মী অনেকেই প্রয়াত, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। সবাইকে শুভেচ্ছা ও ভালো থাকার প্রার্থনা।
নবীনতর পূর্বতন